ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের নিয়ে আগ্রহ সঞ্চারের চেষ্টা যারা করেন, তাদেরকে চিহ্নিত করতে কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
প্রায়ই নানা পোস্টে শেয়ার কিনতে প্রলোভন দেখানো হয় ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে পুঁজি হারাচ্ছেন অনেকেই। যদিও নিয়মানুযায়ী কাউকে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এমন পোস্টের পাশাপাশি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগেই চলে আসে ফেসবুকের গ্রুপে। কখন কোন কোম্পানির শেয়ার দর বাড়বে, কখন বিনিয়োগ করতে হবে এমন তথ্য দিয়ে হরহামেশাই্ পোস্ট হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কারা এসব করছে, তাদের চিহ্নিত করতে সোমবার বিএসইসির পরিচালক রাজীব আহমদকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই ধরনের পোস্ট দিয়ে প্রায়ই আকৃষ্ট করা হয় ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের
কমিটিতে আছেন, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশনের সাপোর্টের প্রধান মঈনুল হক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপমহাব্যবস্থাপক আবু নুর মোহাম্মদ হাসানুল করিম, সার্ভিল্যান্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান।
এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বিএসইসি বলছে, ‘সম্প্রতি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, লিংকড-ইন, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারের দর নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা জরুরি। এজন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে যেসব পোস্ট হয়ে সেগুলো যাচাই বাছাই করবে কমিটি। এরমধ্যে যেসব পোস্টের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে চিহিৃত হবে সেসব গ্রুপ ও পেজের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির বিষয়ে এই ধরনের বক্তব্য দেয়া দণ্ডণীয় অপরাধ
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসে। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রভাবিত হয়ে সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত পুঁজিবাজার নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব বন্ধের অংশ হিসাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩৫টিরও বেশি ফেসবুক গ্রুপ ও ৩০টির মতো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হয়। এর বাইরেও আরও গ্রুপ থাকতে পারে।
এসব গ্রুপ থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি সম্পর্কে নানা খবর ও কেনাবেচার পরামর্শ দেয়া হয়। চলে তথ্য কেনাবেচাও। গ্রুপগুলোতে টার্গেট কোম্পানিকে বলা হয় ‘হট আইটেম’।
ফেসবুক পেজের পাশাপাশি কথিত হট আইটেম দেয়া হয় ম্যাসেঞ্জার গ্রুপেও
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে এসব গ্রুপে।
‘ডিএসই ক্লাব বিডি’ নামে গ্রুপে ব্যবহার করেছে ডিএসইর লোগে। ডিএসই ও সিএসই ইনভেস্টর ক্লাব (ডিসিআইসি) নামেও একটি গ্রুপ রয়েছে, যার সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই।
এসব গ্রুপের সদস্যদের কেউ কেউ নিজেদের শেয়ার বাজার অ্যানালিস্ট বা বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দেয়। কিন্তু সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, বিএসইসির সনদ ছাড়া কেউ নিজেকে বাজার বিশ্লেষক দাবি করতে পারবে না। আইনে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।